ঢাকারবিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গ্রেপ্তার করা আসামীকে ছেড়ে দেওয়ায় বিপাকে ওসি রাশেদ

শাহাদৎ হোসেন ইমরান :
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ৮:০৪ অপরাহ্ণ । ৪২৪ জন
Link Copied!

শাহাদৎ হোসেন ইমরান :

জুলাই বিপ্লবের হত্যা মামলার আসামি, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের আটকের পর মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ আলী মোহাম্মদ রাশেদ এর বিরূদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ ই আগস্টে ছাত্র জনতার উপর নির্মমভাবে হত্যাকারীদের নামে একাধিক মামলা হয়। সেই মামলার অনেক আসামিদের প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করার সুযোগ করে দেন ওসি। টাকার বিনিময় আসামীর নাম কেটে দেওয়া, আসামির সাথে সমঝোতা করে তাদেরকে গ্রেফতার করছেন না এমন অভিযোগ অনেকের। অনেক আন্দোলন কারীরা দাবি করেন, আটকের পরে কিছু অন্ধকারে মিমাংশা হয়, আবার কিছু আসামি থানায় আঁটকে রেখে মিমাংসা হয়। ইদানীং গভীর রাতে আওয়ামী লীগ নেতা মাদক ও নেট ব্যাবসায়ী ৩৭ নং ওয়ার্ড শোনা পাড়ার মাসুদের বাসায় অভিযানের পর ছেড়ে দেওয়া হয় এবং হত্যা মামলার আসামি মাদক ব্যবসায়ী বারেক সরকারকে গ্রেপ্তার করে ছেড়ে দেয় গাছা থানা পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার সময় গাছার কলমেশ্বর এলাকা থেকে গাজীপুর মহানগরীর গাছা মেট্রো থানা এলাকায় জুলাই বিপ্লবে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত মিনহাজ হত্যার অন্যতম আসামি আসাদুজ্জামান বাবু ওরফে লম্বা বাবুকে আটকের পর থানা থেকে ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদের বিরুদ্ধে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মহলের চাপে আবার তাকে তার শ্বশুরবাড়ির এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে একটি জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা মুহুর্তের মধ্যে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ঐ সংবাদের প্রতিবেদক বাবুর বিষয়টি নিয়ে আলী মোহাম্মদ রাশেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুল করে ফেলেছি, দেখা কইরেন। থানা থেকে আসামিকে ছেড়ে দিলেন কেন-এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, শারীরিক অবস্থা খারাপ তথা হার্টঅ্যাটাকের লক্ষণ দেখে আসামি বাবুকে প্রথমে ছেড়ে দিয়েছিলাম। পরে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সংবাদে গাজীপুর মেট্রোপলিটন (জিএমপি) পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান ঐ জাতীয় গণমাধ্যমকে জানান, অনেক চেষ্টা করেও আওয়ামী দোসরমুক্ত করা যাচ্ছে না প্রশাসন। আসামি হার্টঅ্যাটাক করায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে আমাকে প্রথমে ভুল বুঝিয়েছিল। তবে পুনরায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা সেটি আমি জানি না। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় ব্যাবসায়ী আবুল হোসেন জানান, আমি দীর্ঘদিন যাবত আমার এক আত্মীয়র ফ্যাক্টরি থেকে জুট নিয়ে ব্যবসা করি, আমি কোন রাজনীতি করি না বিধায় আমার এই ব্যাবসাটি ক্ষমতার দাপটে একটি গ্রুপ জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করে এতে আমি গাছা থানার শরণাপন্ন হই তখন ওসি বিষয়টি সমাধান করে দিবে বলে আশ্বাস দেন। কিছুদিন পরে মীমাংসা না করে একদিন ফোন দিয়ে বলে ওদের মাল দিয়ে দেন ওরা ব্যবসা করুক আপনি তো এতদিন ব্যবসা করেছেন তাই আমি আমার ব্যাবসা থেকে চলে আসতে বাধ্য হই। থানায় অভিযোগ, জিডি, কোর্টের কোন তদন্ত আসলে দুই পক্ষকে ডেকে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করা, সমাধানের কথা বলে সময় কালক্ষেপণ করাসহ নানা অভিযোগ উঠে তার বিরূদ্ধে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক গাছায় বসবাসকারী বাসিন্দারা জানান, আমরা গাছা থানায় কোন ধরনের পুলিশি সহযোগিতা পাইনা। অন্যান্য থানার সেবার মান অনুযায়ী গাছা থানার কোন সেবাই পায় না আমরা।

বড় বাড়ির বাসিন্দা আব্দুর রহমান খোকন ও শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, ১৪ বছরের আমার ভাগ্নিকে ৪৫ বছরের একজন পুরুষ কিডনাফ করেছে, থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে ওসি আমাদেরকে বলেন, এখান থেকে বের হয়ে যাও এটা প্রেম ভালবাসা করে বেড়িয়ে গেছে, বেশি কথা বললে মেরে হাজতে ঢুকিয়ে রাখবো।

এলাকাবাসী জানায়,এলাকায় মেলা এবং গানের আসর দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন গাছা থানা পুলিশ। বড় বাড়ি জয় বাংলা রোডে গভীর রাতে এক গ্রুপ নর্তকী দিয়ে গান ও নাচের আসর করেন সেখানে ওসির অনুমতি আছে বলে দাবি করেন এবং এই আসরে শত শত লোক রাতভর মাদক সেবন, মাদক বিক্রয় ও চুরি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটায়। এরাই কিন্তু এই গানের আসরে অসামাজিক নৃত্য দিয়ে জুয়া খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তারা আরও জানান, ৯৯৯এ ফোন দেওয়ার পরেও পুলিশ আসে একঘন্টা পরে, আসামিকে মাদক সেবন অবস্থায় ধরিয়ে দিলাম। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা পুলিশের উপর আর আস্থা রাখতে পারছি না।

১। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রীট পিটিশন নং-৩৩৪৩/২০১০ এর আদেশ ২। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের স্মারক নং-আইন/রীট/১১৬-২০১০ (রীট-৩৩৪৩/১০) ১৬০/(৯৩) তারিখ-১২/০১/২০১৩ খ্রিঃ উল্লেখিত আদেশ ও স্মারকসমূহের নির্দেশনা অনুযায়ী, অর্থ আদায়, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, ফ্ল্যাট, প্লট তথা সিভিল বিষয়ে কার্যক্রম পুলিশের এখতিয়ার বর্হিঃভূত।

কিন্তু গাছা থানায় আইন বহির্ভূত জমি জমা, লেনদেন সংক্রান্ত এবং বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে থানায় আসলে থানাতেই বিচার সালিশি করে মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। এতে বাদী বিবাদী দুই পক্ষের কাছ থেকেই মোটা অংকের টাকা লেনদেন করা হয় এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এছাড়া  ডিস, জুট ব্যবসা ও বিভিন্ন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের দখল বাণিজ্য নিয়ে যত সমস্যা, সমঝোতা মিমাংসা হয় এবং দিনে কম পাওয়া গেলেও রাত ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ওসি থানায় বসে থাকেন যত ধরনের দহরম মহরমের একাধিক অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

এর আগে গাছা থানার পুলিশ তদন্তের নামে হয়রানি এবং বাদী বিবাদী দুই পক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরা থানার সামনের দোকান ও থানার তিনতলায় মীমাংসার নামে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিচ্ছেন এই প্রশ্নের জবাবে গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ আলী মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, লেনদেন গুলা সিম্পল এগুলা সাধারণ ধরনের চেয়েও সাধারণ বলে উড়িয়ে দেন। আরো জানান লেনদেন যাই হোক রিপোর্ট টা সঠিক কিনা এটা দেখবেন ১০ লাখ ২০ লাখ টাকা তো নেয় না কিছু টাকা নেয় এটা আপনার একটা কাজে গেলে আসা-যাওয়ার খরচ। মানুষ ৫০০-১০০০ হাজার টাকা দেয় উনারা কাজ করে দিচ্ছে লেনদেনটা হলে এটা স্বাভাবিক বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে থানায় এসে মীমাংসা করে নেন এগুলা মানবিক দিক দিয়ে মীমাংসা করে দিতে হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বহুবার সংবাদ প্রচার হয়েছে।

বর্তমান বিষয়ে জানতে চাইলে, গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ আলী মোহাম্মদ রাশেদ বলেন আগের বিষয়গুলো এখন বলতে পারছিনা। আর বাবুকে গ্রেপ্তারের পরে ছেড়ে দেওয়া হয় নাই। নাচ গানের আসর ও মাদকের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দুই বার আসর ভেঙ্গে দিয়েছি, অন্যান্য অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অস্বীকার করেন তিনি।

You cannot copy content of this page