(অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত সংস্কারের পাশাপাশি জনগণের মধ্য থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে পদদলিত করতে হবে। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে কখনোই প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না।)
শের ই গুল :
৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের পরবর্তী সময় থেকে কয়েকমাসের মধ্যে বাংলাদেশের ললাটে ষড়যন্ত্রের কালিমা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। মূল কথা হচ্ছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে নাটক করেছে, তারা সঙ্গতভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং যখনই সুযোগ পেয়েছে ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীগুলো একত্রিত হয়ে দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষতিসাধনে ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। বর্তমান সময়ে ক্ষমতা হারিয়ে তারা গুজবকে বেছে নিয়েছে এবং গুজবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের মধ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে অব্যাহতভাবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় বাংলাদেশে একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা দেশের বিরুদ্ধে ভিন্ন রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করলে তাতে সায় প্রদান করে, মদদ দিয়ে থাকে। দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিগত দিনে তারা ভোট চুরি করেছে। দেশের ছাত্র জনতাকে নির্বিচারে নিজেদের সন্ত্রাসী বাহিনী এবং তাদের লালিত পুলিশ বাহিনী দিয়ে হত্যা করেছে। তথাপি ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। বিদেশিরা পার্শ্ববর্তী দেশ মদদ দেবে দেশের বিরুদ্ধে এ খবরে তাদের মধ্যে উল্লাস দেখা যাচ্ছে, আনন্দে আটখানা! দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এ ধরনের খবরে যাদের মধ্যে উন্মাদনা দেখা যায় তাদের ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষেই ফেলতে হবে আপনাকে।
উন্নয়নের নামে আগে এক ধরনের ষড়যন্ত্রের রেশ দেখা গিয়েছে, বর্তমানে ভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র দেখা দিয়েছে। তবে দেশের সাধারণ জনতা সব সময়ই ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে এবং করেও যাচ্ছে যার কারণেই বাংলাদেশের অগ্রসরমান যাত্রা প্রবাহিত এবং নতুন প্রজন্মের সারথিরা প্রত্যেকেই প্রত্যাশা করে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে দেশ সংস্কার হওয়া না পর্যন্ত একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশের মানুষকে ভোট প্রদানে বিরত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে। বিদেশিদের ওপর ভরসা করে বিদেশিদের কাছ থেকে দেশের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে প্রত্যাশা করছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
বিগত দিনে, দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখনই যথাযথভাবে সম্পন্ন হয় নাই। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান করতে পারেনি। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টারা শপথ গ্রহণ করে দাপ্তরিক কাজও শুরু করেছে। তারা প্রত্যাশার কথা বলছেন জনসাধারণকে এবং জনসাধারণও তাদেরকে দায়িত্ব সম্পর্কে গণমাধ্যমে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছে। ৫ আগস্টের পরের সময়ে একটি উৎসবমুখর ও প্রাণোচ্ছল পরিবেশের সূচনা হয়েছে বিপরীত দিকে দেখা যাচ্ছে-একটি পক্ষ এখনো বিদেশিদের অবৈধ ভূমিকার প্রত্যাশা করছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারোর নেই। এ বিষয়টি কেন ষড়যন্ত্রকারীরা বুঝতে বারবার ব্যর্থ হয়? তাদের মনে রাখতে হবে, এ দেশের মর্যাদাকে খাটো করার অধিকার তাদের কেউই দেয়নি। সেই কারণে যারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশিদের ওপর ভরসা করেছে তাদের ভোটের মাঠে জনগণ উপযুক্ত জবাব প্রদান করবে এবং বারবার করবে। তদুপরি তাদের শিক্ষা হবে কিনা তা কেউ জানে না। বরং এসব কর্মসাধন করে তারা জনগণের কাছে নিজেদের চরিত্রকে বাজেভাবে উপস্থাপন করছে।
তবে এসব কর্মে যে বিদেশিদের সায় নেই সেটি বলা যাবে না। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর অধিকাংশ দেশই বাংলাদেশের সরকার প্রধানের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে। এখন আবার কতিপয় রাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করছে। তাদের ভাষ্য হচ্ছে বিগত দিনে সামগ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা সুষ্ঠু হয়নি। তারা বলার চেষ্টা করছে, কতিপয় দল বিগত দিনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি এবং একটি দলের নেতা-কর্মীদের জেলহাজতে রাখা হয়েছিল। বর্তমান উপদেষ্টারা বলেনি অমুক দল নির্বাচনে না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রকৃতঅর্থে বিদেশি ষড়যন্ত্র গোষ্ঠীর আচরণ মূলত এটিই। বাংলাদেশ নিয়ে কতিপয় বিদেশিদের এমন আচরণ সম্পর্কে এ দেশের আপামর জনসাধারণ সচেতন ও সজাগ। তাদের স্ববিরোধী আচরণ নিয়ে মোটেও এ দেশের জনগণ বিভ্রান্ত নয়। জনগণ গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে গণতন্ত্রের অব্যাহত ধারার পক্ষে তাদের সুচিন্তিত রায় প্রদান করেছে। এখানে ষড়যন্ত্রের কোনো জায়গা নেই এবং ষড়যন্ত্রকারীরা কখনোই আলোর মুখ দেখবে না। ইতিহাসের আলোচনায় বিভিন্ন সময়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষোদগার করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্তদেরও ইতিহাস ক্ষমা করবে না।
সবশেষ বলা যায়; ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে চপেটাঘাত করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ইশতেহার প্রদান করেছে সেটি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা তাদের পরিকল্পনার কথা গণমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। সাধারণ জনগণও নবগঠিত উপদেষ্টাদের প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের ব্যাপারে মতামত প্রদান করেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ব্যাপারে সরকার প্রধান জোর প্রদান করেছেন। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি এবং প্রত্যাশা রাখি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরকার সফল হবে এবং সরকারের পাশাপাশি জনগণের মধ্য থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে পদদলিত করতে হবে। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে কখনোই প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না। ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করবে এটা জেনেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং পরিকল্পিত উপায়ে একটি স্বনির্ভর ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সর্বদা কাজ করে যেতে হবে।