ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইভ্যালির (এমডি) রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমার ২ বছরের কারাদণ্ড সহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

এস এম জাহিদ হোসাইন :
জানুয়ারি ৩০, ২০২৫ ২:৩২ পূর্বাহ্ণ । ২৪ জন
Link Copied!

এস এম জাহিদ হোসাইন :

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) প্রতারণার দায়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল (৪২) ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন (৩৫) কে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র এ রায় দেন। দণ্ডের পাশাপাশি তাদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত।বাদীপক্ষের আইনজীবী তৌসিফ মাহমুদ গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য জানান।

আরও জানা গেছে, ইভ্যালি ডট কম নামের ওয়েব সাইট, ফেসবুক পেজের মাধ্যমে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করা হয়।গত ৪ জুলাই, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ৩৩৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলার অভিযোগ ও রয়েছে আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালি ডটকমের বিরুদ্ধে মামলা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহক গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি যে পরিমাণ অর্থ নিয়েছে তারমধ্যে ৩৩৮.৬২ কোটি টাকার কোনো হদিস খুঁজে পাওয়া যায়নি আজ ও যা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে তার আজও মেলেনি কোন উপযুক্ত সন্ধান। এই অর্থের সন্ধানে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

বিগত দিনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় যে, ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭.১৮ কোটি টাকা। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ ২১৩.৯৪ কোটি টাকা এবং মার্চেন্টদের নিকট হতে ১৮৯.৮৫ কোটি টাকার মালামাল বাকিতে গ্রহণের পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৩.৮০ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে ইভ্যালির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওয়া আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানোর পর অনুসন্ধানে কাজ করছে সংস্থাটি।

দুদকের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছে। এ ব্যাপারে দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করেছিলেন কমিশন। টিমের আরেক সদস্য হলেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শিহাব সালাম।

একইসঙ্গে, ইভ্যালির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওয়া আর্থিক অনিয়মগুলো তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে পৃথক চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়। এছাড়া, গ্রাহকদের কাছ থেকে ২১৪ কোটি টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া ও মার্চেন্টদের ১৯০ কোটি টাকা পাওনা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে নির্দেশ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু আজও মিলেনি তার আসল রহস্য কোথায়। তাদের দুর্নীতির খুঁটির জোর ই বা কোথায়।

ইভ্যালির একজন ভুক্তভোগী তাদের প্রলোভনের শিকার হয়ে মোঃ তৌফিক মাহমুদ ইভ্যালির প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২১ সালের ২০ মার্চ ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ বাইক অর্ডার করেন। যার মূল্যবাবদ দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। তিনি ৩ – এপ্রিল একই মডেলের আরও দুটি বাইক অর্ডার করেন। যার মূল্যবাবদ ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। তবে কর্তৃপক্ষ ৪৫ দিনের মধ্যে বাইক তিনটি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। পরে তিনি ধানমন্ডি অফিসে যোগাযোগ করেন। কর্তৃপক্ষ দুটি চেক প্রদান করে। তবে ব্যাংক হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ না থাকায় ব্যাংক চেক গুলো নির্ধারিত তারিখে ব্যাংকে জমা না দিতে অনুরোধ করেন। আসামিদের কথা বিশ্বাস করে তিনি ব্যাংক চেক ব্যাংকে জমা দেননি।পরবর্তীতে তৌফিক মাহমুদ ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা আদায়ের জন্য তাগাদা দিতে থাকেন। তবে তারা কোনো টাকা তাকে ফেরত দেয়নি।

পরবর্তীতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েও কাজ হয়নি। এ ঘটনায় তৌফিক মাহমুদ ২০২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার ফলশ্রুতিতে আজ বিজ্ঞ আদালত আসামী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন (৩৫) এবং ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল (৪২) কে ০২ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ১০,০০০/- টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ০২ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। কিন্তু আসামিরা এখনো রয়ে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে তাই বাদী পক্ষ্ বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। যাহাতে উক্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের কে গ্রেপ্তার করে মহামান্য আদালতে প্রেরণ করেন এবং মহামান্য আদালতের আদেশ কে সর্বোচ্চ প্রধান্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশেষভাবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।