ঢাকাবুধবার , ২৭ নভেম্বর ২০২৪
  • অন্যান্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রাচীন কাল থেকে নতুন ধানের নবান্ন ‍উৎসব গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে

কানিজ ফাতেমা (রোমানা) :
নভেম্বর ২৭, ২০২৪ ৪:৫৭ অপরাহ্ণ । ১৭ জন
Link Copied!

কানিজ ফাতেমা (রোমানা) :

বাংলাদেশে নবান্ন একটি উৎসব, একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব হলো নবান্ন উৎসব। মাঠে মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ, বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। ফলন যেমনই হোক, কৃষকের মুখে ধানকাটার গান মনে করিয়ে দেয় নবান্ন উৎসবের কথা।

অগ্রহায়ণ শব্দের অর্থ বর্ষ শুরুর মাস। আর অগ্রহায়ণের প্রথম দিনটিই বাংলাদেশে নবান্ন যাপনের দিন হিসেবে পরিচিত। দেশের প্রাচীনতম উত্সবগুলোর একটি নবান্ন উৎসব।

কার্তিক পেরিয়ে নীরবে আবির্ভাব ঘটে অগ্রহায়ণের। একসময় বাঙালির নতুন বছর শুরু হতো অগ্রহায়ণ মাস দিয়ে, তাই এ মাসের নাম হয়েছে অগ্রহায়ণ। এ মাসের প্রথম দিনে উদ্‌যাপিত নবান্নই বাঙালির ঐতিহ্যবাহী শস্যোত্সব। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়ে থাকে, নবান্ন তার অন্যতম। নবান্নের শব্দগত অর্থ ‘নতুন অন্ন’। নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবই নবান্ন। সাধারণত, অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পরে এই উৎসব হয়। ঋতুবৈচিত্র্যে হেমন্ত আসে শীতের আগে। কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মাস নিয়েই হেমন্ত ঋতু।

বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী অগ্রহায়ণ অষ্টম মাস হিসেবে বিবেচিত হলেও হেমন্ত ঋতুর দ্বিতীয় এ মাসের প্রথম দিনটিই বাংলাদেশের নবান্ন। বাংলার ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করার জন্য মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে নতুন চালের পিঠা ও পায়েস রান্না করে ধুমধামের সঙ্গে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। গ্রামের বধূরা অপেক্ষা করেন বাপের বাড়িতে নাইওরে গিয়ে নবান্ন যাপনের জন্য। পিঠা, পায়েস, মুড়ি-মুড়কি আর নতুন চালের ভাতের সুগন্ধে ভরে ওঠে মন।

কার্তিক মাসের শুরু থেকেই দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। এ সময়ে কোনো বাড়িতে দেখা যায় ঢেঁকিতে চাল কোটা হচ্ছে পিঠার জন্য, কোনো বাড়িতে তৈরি হচ্ছে পায়েস। ধর্মাচারের অঙ্গ হিসেবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃত্য, প্রথা ও নানা রীতিতে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদিকে উৎসর্গ এবং আত্মীয়স্বজনকে পরিবেশন করার পরেই গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়ে রান্নাসহ নতুন অন্ন গ্রহণ করে থাকেন। বিশেষ লৌকিক প্রথা অনুযায়ী নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের একটি অঙ্গ। প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মার কাছে পৌঁছে যায়।

কাকের উদ্দেশ্যে দেওয়া নৈবেদ্যকে বলে ‘কাকবলী’। অতীতে পৌষসংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এ কারণেই পার্বণ কৃত্য অনুযায়ী নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও করা হয়ে থাকে কোথাও কোথাও। তবে এসব প্রাচীন প্রথা এখন আর খুব একটা দেখা যায় না।

You cannot copy content of this page