নাজিম সরদার-খুলনা :
গত বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় বিএনপি নেতৃবৃন্দর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন। প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন কেসিসি’র সচিব শরীফ আসিফ রহমান।
স্মারকলিপিতে বিএনপি নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, খুলনা নগরীতে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মহামারী আকারে ছড়িয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে; ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। তবুও মশা নিধনে কেসিসি’র কার্যকর পদক্ষেপ না দেখে হতাশ নগরবাসী। এছাড়া জরাজীর্ণ সড়ক ও অলি-গলি এবং ভাঙাচোরা ড্রেনের কাজ মন্থর গতিতে চলায় উন্নয়ন বিড়ম্বনা নগরবাসীর ‘গলার কাটা’ হয়ে দাড়িয়েছে। নগরীর ব্যস্ততম ময়লাপোতা মোড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে রাস্তাটি সংকুচিত করার প্রতিবাদে সচেতন নাগরিক সমাজ মানববন্ধন করেছে। সে বিষয়েও কেসিসি’র উদাসীনতা চরম দায়িত্বহীনতায় পরিচয় দিচ্ছে।
তারা উল্লেখ করেন বিগত ১৭ বছরের অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দূর্বার ও লাগাতার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা গুম হয়েছেন, যারা মামলা ও হামলার শিকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এক দূর্বিসহ দিনযাপনে বাধ্য হয়েছেন- বিএনপি ও অন্যান্য সংগঠনের সেই সব ত্যাগী পরিক্ষীত নেতাকর্মীদের স্বপ্ন ও আকাংখার সাথে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদ, আহত ও অংশগ্রহণকারী প্রতিটি বীর সেনানীর প্রত্যাশা আজ এক সরল রেখায় এসে মিলিত হয়েছে। আর তা হলো একটি দূর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র যেখানে সব মানুষ সমানভাবে তাদের অধিকার ভোগ করবে, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে এবং মানুষ ন্যায়বিচার পাবে।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করেন, অন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে সরকারের উপদেষ্টাদের অনভিজ্ঞতা যতোটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায় প্রশাসনের সর্বস্তরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিস্টদের দোসরদের। তাদের সুপরিকল্পিত অপতৎপরতায় প্রশাসনের সর্বস্তরে স্থবিরতা জেকে বসেছে। সংষ্কারের মাধ্যমে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ধূলিস্যাত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। খুলনা মহানগরী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের কিছু মৌলিক চাহিদা, প্রত্যাশা এবং বিপরীতে তাদের প্রাপ্তির দিকটি বিশ্লেষণ করলে বিষয়গুলো আপনাদের সামনে আরও সুষ্পষ্ট হবে।
বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় এবং শীত মৌসুম পর্যন্ত জীবনঘাতি এই মহামারির দোর্দন্ড দাপট চলে। সময়ে সাথে সাথে রোগটি জটিল ও মারাত্মক রূপ নিচ্ছে এবং রোগীর শরীরে নানা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু রোগীর শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়ে চরম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ মশক নিধনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কর্মতৎপরতা নগরবাসীকে রীতিমতো হতাশ করেছে। মশার লার্ভা নিধনে তাদের কোন উদ্যোগ যেমন নেই, পাশাপাশি ফগার মেশিন দিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়ার কুন্ডলীর ভেতরেই শত শত মশার জীবন্ত ওড়াওড়ি প্রমাণ করে দেয়, কেসিসির ছিটানো এই স্প্রে মশক নিধনে কেবল অকার্যকরই নয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সততার ভয়াবহ ঘাটতিরও পরিচায়ক।
এদিকে হাসপাতালে মরণাপন্ন রোগীর দেহে প্লাজমা দেয়ার প্রয়োজনে অধিকাংশরাই দ্বারস্থ হচ্ছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কারণে নগরীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকলেও চার্জ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় অনেকেই যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এদিকে হাসপাতালগুলোতে এখনও আওয়ামী আমলে দোর্দন্ড প্রতাপ নিয়ে চাকরি করা ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়েছে বহাল তবিয়তে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি বছরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১১শ’ মানুষ ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১৩ জন।
খুলনা মহানগর এলাকায় চুরি ডাকাতি রাহাজানির ঘটনা যেমন বেড়েছে, পাশাপাশি দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে নগরীর সবগুলো ট্রাফিক পয়েন্টে দীর্ঘ সময় যানজট লেগে থাকছে। এরসাথে যুক্ত হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা ও ড্রেন সংস্কার/পুনঃনির্মান এবং ২২টি মোড়/সড়ক দ্বীপ আধুনিকায়ন। শুরু করার পর কাজ ফেলে রাখায় জনদূর্ভোগ চরমে পৌঁছে দিচ্ছে কেসিসি’র এইসব প্রকল্প। খুলনার ক্রীড়াঙ্গন যে এখনও স্বৈরাচারের দালালমুক্ত হয়নি তার প্রমাণ জেলা ও বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার চার মাস পরেও তার চাটুকার দালালরা রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজ করছে। খুলনার মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স সকল সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন হওয়া সত্বেও কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও অভিজ্ঞতাহীনতার কারণে এখানে কোন টুর্ণামেন্ট যেমন হয়না, তেমনি নতুন খেলোয়াড় তৈরির বিষয়ে নেই কোন উদ্যোগ। নতুন খেলোয়ার সৃষ্টিতে সরকারের বরাদ্দ বিপুল অংকের অর্থের নয়ছয় হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। জনপ্রতিনিধিত্ব সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সব সময়েই জনদাবির কণ্ঠস্বর হিসেবে ভূমিকা রাখে।
স্মারকলিপি গ্রহণকালে কেসিসি সচিব বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু মশা নিধনে, সড়ক ও ড্রেন সংস্কারের কাজ শেষ করা হবে।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলমস তুহিন, ফকরুল আলম, বেগম রেহেনা ঈসা, এড. নুরুল হাসান রুবা, কাজী মাহমুদ আলী, শের আলম সান্টু, বদরুল আনাম খান, মাহাবুব হাসান পিয়ারু, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, একরামুল হক হেলাল, মাসুদ পারভেজ বাবু, হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ, থানা বিএনপির কে এম হুমায়ূন কবির (ভিপি হুমায়ূন), হাফিজুর রহমান মনি, মোঃ মুরশিদ কামাল, থানা সদস্য সচিব মোল্লা ফরিদ আহমেদ, সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান পরাগ, মহানগর বিএনপির সদস্য একরামুল কবীর মিল্টন, অ্যাড. মোহাম্মদ আলী বাবু, শেখ জামাল উদ্দিন, মো. জাহিদ হোসেন, মিজানুর রহমান মিলটন, আলী আক্কাস, শেখ ফারুক হোসেন, মুজিবর রহমান, বিএনপি নেতা সাইদ হাসান লাভলু, ইফতেখার হোসেন বাবু, শেখ মনিরুজ্জামান মনির, মাহাবুব উল্লাহ শামিম, মোল্লা মশিউর রহমান, মোঃ শফিকুল ইসলাম, মোঃ সালাউদ্দীন মোল্লা (বুলবুল), গাজী আফসার উদ্দীন, শেখ মোস্তফা কামাল, আজিজুর রহমান, শেখ আব্দুল আলীম, শেখ মনিরুজ্জামান মনির, শেখ হাবিবুর রহমান, মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ মাহমুদ আলম মোড়ল, লিটন খান, মোঃ সাইফুল আলম, সাহিনুল ইসলাম পাখি, কাজী মোঃ ইকরাম মিন্টু, মোঃ বেলায়েত হোসেন, আহসান হাবিব বাবু, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপির মোঃ নুরুল ইসলাম, মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, মোঃ বায়েজিদ, মেশকাত আলী, মঞ্জুরুল আলম, মোঃ নাজমুস সাকিব, মোঃ সওগাতুল আলম ছগীর, মোঃ আমিন আহমেদ,মোঃ শওকত আলী বিশ্বাস লাবু, সাইফুল ইসলাম, মোঃ ওহিদুজ্জামান হাওলাদার, কাজী মোঃ মিজানুর রহমান, মোঃ আবুল ওয়ারা, মোঃ কামরুজ্জামান রুনু, মোঃ আরিফুল ইসলাম বিপ্লব, শেখ জাকির হোসেন, মোঃ সবুজ হোসেন, মোঃ গোলাম মোস্তফা ভুট্রো, মোঃ মাহফুজুর রহমান মাজু, এ এম মাসুম বিল্লাহ, মোঃ খোদাবক্স কোরাইশী কালু, মোঃ আবুল কালাম, শেখ নুরুল ইসলাম, গাজী সালাউদ্দীন, জাসাস নেতা কাজী জলিল, স্বেচ্ছাসেবক দলের মুনতাসির আল মামুন প্রমূখ।