(তার সম্পদের মধ্যে ভান্ডারিয়া সাব রেজিষ্ট্রারী অফিসে দলিল নং-৮০/২২ তারিখ ১০/০১/২০২২, জমির মূল্য ২৪ লক্ষ টাকা, দলিল নং- ১০২৫/২০২১, ০৪/০৪/২০২১, জমির মূল্য ১২ লক্ষ টাকা, দলিল নং-১২৮:২/২০২০, তারিখ ২১/০৭/২০২০, জমির মূল্য ১০ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, সাফ কবলা দলিল নং ৬৭, তাং-০৯/০১/২০২২ ইং, পরিমাণ-২৫,০০,০০০/- (পঁচিশ লক্ষ) টাকা ও সাফ কবলা দলিল নং ৬৮, তাং-০৯/০১/২০২২ ইং, পরিমাণ-৪৫,৫০,০০০/- (পঁয়তাল্লিশ লক্ষ পাঁচশত) টাকা । বর্তমানে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার লঞ্চঘাট এলাকায় ১০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দুই তলার কাজ চলছে যা ইতোমধ্যে ১৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।)
রবিউল আলম রাজু :
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ কিংবা ডিবির হারুনের মত অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্থ অফিসার যদি কেউ থাকে, অর্থের জন্য যে নিজের দেশের সাথে, দেশের জনগণের সাথে বাংলাদেশ পুলিশের প্রদত্ত রুলস অব রেগুলেশনের তোয়াক্কা না করে মোনাফেকের মত নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার হীন, ঘৃন্ন ষরযন্ত্রে লিপ্ত হয়ে মীর জাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বনে গেছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। কথা বলছি আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগের সকল দুর্নীতিকে সাপোর্ট দিয়ে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করার সবচেয়ে বড় পন্ডিত মোঃ আসাদুজ্জামান হাওলাদার, ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র)’র। বিগত দিনে এই দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা ঢাকা রেঞ্জের শরিয়তপুর জেলা ভেদরগঞ্জ সার্কেল সখিপুর থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় নিরীহ অনেক মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল অংকের অর্থ। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজনৈতিক নেতারা। কর্মরত অবস্থায় তিনি ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক নির্যাতন করেছেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পুলিশকে কয়েক দফায় বদলি করে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগ পুলিশ রেঞ্জে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। গত জুলাই বিপ্লবের সময়ে শরিয়তপুরে কর্মরত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় পুলিশে চাকুরী কালীন অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে অনেক নীরিহ মানুষকে হয়রানীর পাশাপাশি মাদক সিন্ডিকেট সহ বিভিন্ন অপরাধীদের সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো।
আসাদুজ্জামান বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক বলে অভিযোগ উঠেছে। পোস্টিংকৃত স্থানে পুলিশ ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামানের দুর্দান্ত দাপটে মানুষ ছিল অতিষ্ট। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন যায়গায় বদলী হলেও তার আসল চরিত্র এখনও পরিবর্তন হয়নি এদেরকে বিচারের ব্যবস্থায় না আনলে পুলিশের প্রকৃত সংস্কার হবে না বলে মনে করেন সুশীল সমাজ।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর আইজিপি থেকে শুরু করে ডিআইজি ও কমিশনার পর্যন্ত শত শত কোটি টাকার আয় বহির্ভূত মালিক হবার খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ।
মোঃ আসাদুজ্জামান হাওলাদারের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০ কোটি টাকার আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে। জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার ভান্ডারীয়া থানার ভিটাবাড়ীয়া গ্রামের মৃতঃ আব্দুল গণি হাওলাদারের পুত্র মোঃ আসাদুজ্জামান হাওলাদার ১০/০৩/২০০৬ সালে চাকুরীতে যোগদান করেন। বর্তমানে ০৩/০৪/২০২০ তারিখ ঢাকা রেঞ্জ শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ সার্কেল এর সখিপুর থানার ইন্সপেক্টর নিরস্ত্র হিসাবে যোগদান করেন। ৪ বছরে তিনি প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি চাকুরী জীবনে ১৭ বছরে এত সম্পদ কি করে গড়লেন। ১৭ বছরে তিনি ১৩ বার আইনবহির্ভুত কাজের জন্য পুলিশ হেড কোয়ার্টার কর্তৃক পানিশমেন্ট পায় এবং জঘন্নভাবে তিরস্কার হয়েছেন।
আরো জানা গেছে, শরীয়তপুর-২, নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের দোসর এনামুল হক শামীম সহ স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগীতায় উক্ত মোঃ আসাদুজ্জামান ওসি তদন্ত এলাকার সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে বিপুল পরিমাণে অবৈধ অর্থ সম্পদ অর্জন করেন। তার সম্পদের মধ্যে ভান্ডারিয়া সাব রেজিষ্ট্রারী অফিসে দলিল নং-৮০/২২ তারিখ ১০/০১/২০২২, জমির মূল্য ২৪ লক্ষ টাকা, দলিল নং- ১০২৫/২০২১, ০৪/০৪/২০২১, জমির মূল্য ১২ লক্ষ টাকা, দলিল নং-১২৮:২/২০২০, তারিখ ২১/০৭/২০২০, জমির মূল্য ১০ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, সাফ কবলা দলিল নং ৬৭, তাং-০৯/০১/২০২২ ইং, পরিমাণ-২৫,০০,০০০/- (পঁচিশ লক্ষ) টাকা ও সাফ কবলা দলিল নং ৬৮, তাং-০৯/০১/২০২২ ইং, পরিমাণ-৪৫,৫০,০০০/- (পঁয়তাল্লিশ লক্ষ পাঁচশত) টাকা । বর্তমানে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার লঞ্চঘাট এলাকায় ১০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দুই তলার কাজ চলছে যা ইতোমধ্যে ১৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নামে বেনামে রয়েছে তার বিভিন্ন ফ্যাট ও জমিসহ অঢেল সম্পত্তি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ভুক্তভোগি ইরতিয়া রুহুল আমিন দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশকে জানান, আমি ০৬.১০.২০২৪ ইং তারিখ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর ইন্সপেক্টর নিরস্ত্র আসাদুজ্জামান হাওলাদারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। তার আচার ব্যবহার দেখলে মনে হবে আপনার সামনে জলজ্যান্ত একটা শয়তান বসে আছে। ওসি আসাদুজ্জামান পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী করার সুবাদে অবৈধভাবে তার বড় বোন নিলুফা নিলু, মেজ বোনা লাভলী আক্তার, ছোট বোন ফরিদা আক্তার, ছোট ভাই জাকির হোসেনের নামে এবং বেনামে বিপুল পরিমাণে অর্থ সম্পদ করেছেন। এবং সবাই কে ১টি করে পাকা বাড়ী করে দিয়েছে। পিরোজপুরের বাইরেতার শ্বশুর বাড়ী বরিশাল কাজীপাড়া সিএমবি রোড ৫ম তলা ১টি বাড়ী রয়েছে এবং বাগেরহাটে দ্বৈবহাটি থানা এলাকায় ৮ বিঘা জমিতে মাছের ঘের রয়েছে। বর্তমানে ওসি আসাদুজ্জামান হাওলাদার ৫ আগষ্ট এর পর কর্তৃপক্ষ মাদারীপুর পুলিশ লাইনে স্থানান্তর করেছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে আরও অনেক ভুক্তভোগি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ সরকারে বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন বলে জানায়, ইরতিয়ার রুহুল আমিন। তিনি আরও জানান এলাকার অনেক মানুষকে পেইন্ডিং মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে আসছে এই পুলিশ।
মোঃ আসাদুজ্জামান হাওলাদার, ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র)’র সাথে দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশের কথা হলে তিনি জানান, আমি স্বীকার করছি কিছু সম্পত্তি আছে এগুলো নিয়ে আমার বিরুদ্ধে কেউ ষরযন্ত্র করছে। আপনাকে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃপক্ষ কি কারণে ১৩ বার তিরস্কার করেছে এমন প্রশেনর জবাবে তিনি বলেন, আমাকে ১৩ বার তিরস্কারের পাশাপাশি ৩৮ বার পুরস্কিত করেছে। কিন্তু কি কারণে পুরস্কৃত হয়েছেন সে বিষয়টি জানা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোঃ আসাদুজ্জামান হাওলাদার, ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র)’র আত্মীয় স্বজন, ভাই, ভগ্নিপতি সকলকে তিনি তৎসময়ের আওয়ামী লীগের সহযোগিতা নিয়ে জমি জমা সহ ঘর বাড়ি করে বিভিন্ন ব্যাবসা বাণিজ্য ও চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
এ বিষয় নিয়ে হিউম্যান এইড ইন্টারন্যাশনাল এর মহাসচিব সেহলী পারভীন দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন, দেশ সংস্কারের পাশাপাশি এসব দুর্নীতিগস্থ কর্মকর্তাদেরকে তদন্তপূর্বক শাস্তির আওতায় এনে সরকারী চাকুরী থেকে চিরতরে বহিস্কার করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরকম পদক্ষেপ না নিলে, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, দেশ পরিশুদ্ধ হবে না।