আয়েশা সিদ্দিকা :
বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে কোটার সুবিধা নিয়ে ২৭তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার পদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মোস্তাফিজুর রহমান রিপনের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। গত জুলাই বিপ্লবের সময়ে নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় তিনি নরসিংদীতে ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক নির্যাতন করেছেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পুলিশ সুপারকে ওএসডি করে। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা জনাব আনসার আলী পুলিশ সদর দপ্তরে মোস্তাফিজুর রহমান রিপনের বিরুদ্ধে পিতার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে কোটায় চাকরি পাওয়া সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ ৮ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি. দাখিল করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সাল পর্যন্ত যে চারটি মুক্তিযোদ্ধার তালিকা হয়েছে, সেখানে পুলিশ সুপারের পিতা মো. সাহাব উদ্দিন (সাং-ছালুয়াতলা, উপজেলা নালিতাবাড়ী, জেলা শেরপুর নিবাসী)-এর নাম নাই। তিনি কখনও আবেদনও করেন নাই। এমনকি ২০০৪ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াতেও তিনি কোনও আবেদন করেননি। তারপরও সাধারণ নিয়ম নীতি লঙ্ঘন ও প্রভাবশালী মহলের সুপারিশে ৩০/০১/২০০৫-এ আপিল কমিটি হিসেবে গঠিত শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশে ২০০৫ সালের ২৭ মে তিনি গেজেটভুক্ত হন। পুরো বিষয়টি উল্লেখ করে নালিতাবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বরাবর তার গেজেটভুক্তির বিরুদ্ধে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরন করা হলে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষ্য-প্রমানের ভিত্তিতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি ২০১৭ সালে তাকে অমুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করে মতামত প্রদান করেন। উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি খন্দকার মো. আব্দুর রহিম এবং সদস্য সচিব নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরফদার সোহেল রহমানসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরযুক্ত ডকুমেন্টস আছে এই প্রতিবেদকের কাছে। এটি উপজেলা থেকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) -এর কাছে প্রেরণ করা হয় ২০১৭ সালে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সাহাব উদ্দিনের আরেক ছেলে নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার কারণে প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি দীর্ঘদিন স্থগিত রাখে। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে এসপি মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন- ভুয়া সনদ চিহ্নিতের কাজ শুরু করেছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জেলা, উপজেলা পর্যায়ে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেসব এলাকার মানুষ প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করবে। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম সাম্প্রতিক এক সভায় বলেন-মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা সত্যিকার অর্থে যুদ্ধ করেছিলেন, তারা নিজ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। তাঁদের কথা এলাকার সকলেই জানে। তবে যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা জনগণই তাদের চিহ্নিত করবে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যারা সরকারি চাকরি নিয়েছে তাদের তালিকা করছে মন্ত্রণালয়। এসব সনদও যাচাই বাছাই করা হবে।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সরকারের আমলে চারবার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা হয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় কমিটি এক লাখ দুই হাজার ৪৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রকাশ করেছিল। ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের করা তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ৮৯২। ১৯৯৪ সালে করা তৃতীয় তালিকায় ৮৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল থেকে চতুর্থ তালিকায় এক লাখ ৫৪ হাজার ৪৫২ জনের নাম মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত হয়।