শের ই গুল :
(আইনশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসের মুখোমুখি দেশ দেশের কার্যকর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোথায়? সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে জনগণের আস্থা থাকলেও অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন-সেনাবাহিনী কি পুলিশের ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়েছে? জনগণের নিরাপত্তা যদি সুনিশ্চিত না হয়, তবে এই বাহিনী কতটা কার্যকর? ইন্টারপোলের রেড নোটিশে ঝুলে থাকা সন্ত্রাসীদের মুক্তি, অস্ত্র উদ্ধার, যৌথবাহিনীর অভিযান-সবকিছুতেই জনমনে ভীতির সৃষ্টি করছে।)
বর্তমান বাংলাদেশ এক জটিল ও সংকটময় সময় পার করছে। ছাত্রহত্যা, পুলিশহত্যা, জামায়াত-হিজবুত জঙ্গিবাহিনীর ষড়যন্ত্র, আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা-এই সবই যেন একটি গভীর প্রেক্ষাপটে দেশের ভবিষ্যৎকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে। ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সরকার এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগ নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা কল্পনা চলছে, তবে জনগণের সামনে কোনো সুস্পষ্ট উত্তর নেই।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও আন্দোলনের ধাক্কা ছাত্র ও পুলিশের রক্তে ভেজা মাটিতে যেসব বিচার এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, সেসব হত্যার বিচার কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা অজানা। জনগণের মনে প্রশ্ন-এই আন্দোলনের পেছনে কী সত্যিই শুধুই রাজনৈতিক কৌশল, নাকি জামায়াত-হিজবুত জঙ্গিবাহিনীর গভীর ষড়যন্ত্র? সরকার পতনের পথ সুগম করতে যেভাবে হত্যা ও সহিংসতা ছড়ানো হচ্ছে, তা কি দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে?
নির্বাচন ও সংস্কারের অমীমাংসিত প্রশ্ন নির্বাচন ও দেশ সংস্কারের রোডম্যাপ কোথায়? কথিত ‘আয়না ঘর’ বা ভবিষ্যতের পরিকল্পনার ছক, যেটা জনগণের সামনে আশা জাগাতে পারতো, সেটাও অজানা। জনগণ তাদের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারকে দেখতে চায়, কিন্তু যখন পরিকল্পনার স্বচ্ছতা নেই, তখন এই অন্ধকারে দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, সে প্রশ্ন উত্তরহীন থাকে।
আহতদের চিকিৎসা ও ভারতীয় চাকরিজীবী প্রসঙ্গ আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা কীভাবে হচ্ছে? সরকার এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, জনগণ তার খোঁজ রাখে না। এরই মধ্যে আরেকটি গুরুতর প্রশ্ন উঠছে-ভারতীয় ২৬ লাখ চাকরিজীবীর প্রসঙ্গ। কেন এখনও তাদের বরখাস্ত করা হলো না, যখন দেশের বহু তরুণ বেকারত্বে ভুগছে?
আইনশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসের মুখোমুখি দেশ দেশের কার্যকর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোথায়? সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে জনগণের আস্থা থাকলেও অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন-সেনাবাহিনী কি পুলিশের ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়েছে? জনগণের নিরাপত্তা যদি সুনিশ্চিত না হয়, তবে এই বাহিনী কতটা কার্যকর? ইন্টারপোলের রেড নোটিশে ঝুলে থাকা সন্ত্রাসীদের মুক্তি, অস্ত্র উদ্ধার, যৌথবাহিনীর অভিযান-সবকিছুতেই জনমনে ভীতির সৃষ্টি করছে।
অর্থনৈতিক দুরাবস্থা ও চাঁদাবাজি জনগণ তাদের ব্যাংকের টাকাও উত্তোলন করতে পারছে না, যা দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর আস্থা সংকটের ইঙ্গিত দেয়। বন্যার্তদের জন্য সংগ্রহ করা এক হাজার কোটি টাকার হিসাব কোথায়? আর চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের ফলাফল কী?
সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও সীমান্তের নিরাপত্তা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন, মসজিদ-মন্দিরে হামলা, লুটপাট—এসব ঘটনায় সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি? সীমান্ত এলাকার নাগরিকদের নিরাপত্তার হাল কেন এমন?
দেশের ভবিষ্যৎ কোথায়?
আজকে বাংলাদেশ এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত। মানুষ ব্যাংকের টাকা পায় না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শূন্য, নেতৃত্বের অভাব প্রকট, আর স্বাধীনতার স্বপ্ন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ড. ইউনুস সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি? যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা কি আদৌ জনগণের কল্যাণে কাজ করছেন, নাকি নিজেদের স্বার্থে নিয়োজিত?
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের উচিত সকল প্রশ্নের সম্মুখে দাঁড়িয়ে জবাব দেওয়া। জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন করা, গণতন্ত্রের পথ খুঁজে বের করা, এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা এখন সময়ের দাবি। নতুবা, এই অন্ধকারের পথে বাংলাদেশের গন্তব্য অজানা এবং অপ্রত্যাশিত হবে।
দেশের এই কঠিন সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে আরও কঠিন সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। সরকারের উচিত সকল প্রশ্নের স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ জবাব দিয়ে জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা।