এ বি অপু :
পহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত প্রথম কূটনৈতিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৬০ সালের ‘সিন্ধু জল চুক্তি’ স্থগিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ‘ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি’র (CCS) বৈঠকে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের অর্থনীতি, কৃষি এবং জলের ওপর নির্ভরশীল বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
বৈঠকে অংশ নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। বৈঠকে মোট পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়:
1. সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত: পাকিস্তানে প্রবাহিত পানি নিয়ন্ত্রণে ভারতের পুরনো বাধ্যবাধকতা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত।
2. অটারি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট বন্ধ: সীমান্ত বাণিজ্য ও পারস্পরিক আদান-প্রদানে কঠোরতা।
3. সার্ক ভিসা সুবিধা বাতিল: পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য থাকা বিশেষ ভিসা সুবিধা প্রত্যাহার।
4. ভারতে নিযুক্ত পাক সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার: সাত দিনের মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ।
5. পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই কূটনৈতিক পদক্ষেপকে বিশেষজ্ঞরা “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক অব ওয়াটার” বলেও অভিহিত করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের বিদ্যুৎ সংকট, কৃষি উৎপাদন এবং পানীয় জলের উপর এক গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
সিন্ধু জল চুক্তির গুরুত্ব:
১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমলে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে ছয়টি নদী – সিন্ধু, ঝেলম, চেনাব, রাভি, বিয়াস ও শতদ্রু – ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বণ্টনের নির্দেশিকা নির্ধারিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী পূর্বাঞ্চলের তিনটি নদীর নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে ও পশ্চিমাঞ্চলের তিনটির নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের হাতে ছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের সিন্ধ ও পাঞ্জাব অঞ্চলের কৃষকরা পানির উপর নির্ভর করতেন।
অন্যদিকে, ভারতের পদক্ষেপে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তানে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “ভারতের এই সিদ্ধান্ত চুক্তিভঙ্গ এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।” ইসলামাবাদে এক জরুরি বৈঠকে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানান, “এই সিদ্ধান্ত দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা ডেকে আনবে।”
পাকিস্তানের প্রাক্তন মন্ত্রী চৌধুরী ফওয়াদ হুসেইন বলেছেন, “এটি আমাদের কৃষকদের ধ্বংস করে দেবে।” দেশটির প্রভাবশালী সাংবাদিক হামিদ মীর এক টেলিভিশন আলোচনায় এই পদক্ষেপকে “জল সন্ত্রাস” বলে আখ্যা দেন। পাকিস্তান বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের কাছে উত্থাপন করতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাবনা:
যদিও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মহলের দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা করছে, কিন্তু ভারতের কূটনৈতিক প্রভাব এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে বৈশ্বিক মহলের প্রতিক্রিয়া মিশ্র হতে পারে। ভারত ইতোমধ্যেই দাবি করছে, এটি আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে।
এই পদক্ষেপে ভারত একটি কড়া বার্তা দিয়েছে সন্ত্রাসবাদকে আর সহ্য করা হবে না। যদি সামরিক পদক্ষেপ আসে, তবে সেটিও যে আরও কঠোর হতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই ‘অসামরিক স্ট্রাইক’ ভবিষ্যতের ভারত-পাক সম্পর্কের পথে এক যুগান্তকারী মোড় হতে পারে।