(দেশী-বিদেশী বিখ্যাত ব্র্যান্ড সমূহের প্রসাধনীর মোড়ক নকল করে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। কখনও কখনও সেই ভেজাল প্রসাধনী বিক্রয় করা হচ্ছে আসল পণ্যের দামে। সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা হলে তদারক কর্তৃপক্ষ নকল-ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় বটে, তবে উক্ত আলোচনা থেমে গেলে রহস্যজনকভাবে ঐ অভিযানও বন্ধ বা থেমে যায়)
শের ই গুল :
বেশি সমস্যা হলো, দেশী পণ্য অপেক্ষা বিদেশী পণ্যের মান ভালো, এমন বিশ্বাস থেকে একটু অবস্থাপন্ন ক্রেতারা বিদেশী প্রসাধনীর দিকে ছুটলেও সেখানে ঐ ভেজাল প্রসাধনীর কারবারিরা হাত বাড়াচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে অথবা তাদের সঙ্গে অশুভ আঁতাত গড়ে প্রতি বছর অবৈধ উপায়ে আমদানি হচ্ছে শত-সহস্র কোটি টাকার পণ্য। বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে কালার কসমেটিকসের চাহিদা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার। তার সঙ্গে স্কিন কেয়ার পণ্যের চাহিদা আছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার। এ চাহিদার বড় অংশই আমদানি হয় চোরাকারবারির মাধ্যমে, যার মূল্য প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে একদিকে মানহীন পণ্যে বাজার ভরে উঠছে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় দেশ। এরপর দেশে যেসব কোম্পানি উন্নত ফর্মুলেশন-গবেষণা খাতে বিনিয়োগ করে উন্নতমানের পণ্য উৎপাদনের চেষ্টা করছে, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত। জানা যায়, এ সব পণ্যের কাঁচামালে শুল্ক-কর বেশি; বিপরীতে সরাসরি প্রসাধন সামগ্রীর আমদানিতে শুল্ক-কর কম।
নকল ও ভেজাল পণ্যে বাজার সয়লাব। সংবাদমাধ্যমে এরূপ শিরোনাম যেমন নতুন নয়, এ বিষয়ে তদারক কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যও তেমন পুরাতন। এ চিত্র আবারও স্পষ্ট হয়েছে প্রসাধনীর আসল-নকলের চক্কর নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি দৈনিকের রিপোর্টে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের মোট পণ্যের ৬০-৭০ শতাংশই এখন ভেজাল আর নকল। দেশী-বিদেশী বিখ্যাত ব্র্যান্ড সমূহের প্রসাধনীর মোড়ক নকল করে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। কখনও কখনও সেই ভেজাল প্রসাধনী বিক্রয় করা হচ্ছে আসল পণ্যের দামে। পুরাতন ঢাকার ব্যবসায়ীর বরাতে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, সাবান, পানি, রাসায়নিক আর কিছুটা সুগন্ধির মিশ্রণে শ্যাম্পু প্রস্তুত করা হয়। পুরাতন যন্ত্রপাতির মরিচা তোলায় ব্যবহৃত তৈলের সঙ্গে সুগন্ধি মিশিয়ে তৈরি হয় মাথায় ব্যবহারের তৈল। অনলাইন-অফলাইনে মন-ভোলা বিজ্ঞাপন দেখে ক্রেতারা কিনছেন এমন নকল পণ্য। এতে তারা একদিকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে পড়ছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এ সব পণ্য ব্যবহারে ত্বকে দাগ পড়া, মাথার চুল পড়া, ত্বক বিকৃতিসহ বিভিন্ন চর্মরোগ, এমনকি ক্যান্সারেও আক্রান্ত হচ্ছেন ভোক্তা সাধারণ; যা উদ্বেগজনক, বিশেষত পুরাতন ঢাকাকেন্দ্রিক এসব পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম অনেকাংশে উন্মুক্ত হলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয় না। কখনও কখনও সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা হলে তদারক কর্তৃপক্ষ নকল-ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় বটে, তবে উক্ত আলোচনা থেমে গেলে রহস্যজনকভাবে ঐ অভিযানও বন্ধ বা থেমে যায়।
খাত-সংশ্লিষ্টদের এ বক্তব্য ফুৎকারে উড়িয়ে দেবার অবকাশ নেই, সরকার প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তা দিলে দেশে দ্রুত মানসম্মত প্রসাধন সামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তার সঙ্গে আমদানি নির্ভরতাও হ্রাস পাবে। শুধু তাই নয়, তখন ভোক্তারা যেমন ভেজাল ও নকল পণ্য ক্রয়জাত বহুবিধ ক্ষতি থেকে মুক্তি পাবেন, তেমনই নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ মিলবে। এসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার এন্ড বিউটি প্রডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশের -এএসবিএমইবি’র সাধারণ সম্পাদকের এ বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য, স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী এ শিল্পে বিনিয়োগ হলে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব। বিষয়টি বর্তমান সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত বলেই মনে হয়। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে এ সব পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনেরও সামগ্রিক উন্নতিসাধন জরুরি।
রিপোর্ট অনুসারে, আজ পর্যন্ত বাজারে প্রসাধন পণ্যের অধিকাংশেরই মান ঠিক করতে পারেনি সংস্থাটি। সামগ্রিক উৎপাদনের মাত্র ৩০ শতাংশ পণ্য বিএসটিআইর মান সনদের আওতায় এসেছে। বাকি ৭০ শতাংশের কী হচ্ছে, প্রকাশিত রিপোর্টটি তা বুঝবার জন্য যথেষ্ট। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
|| প্রকাশক ও সম্পাদক : আব্দুল্লাহ আল মামুন || নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস জয় ||
Copyright © 2024 আমার প্রাণের বাংলাদেশ. All rights reserved.You cannot copy content of this page