সুজিত শিকদার-নাজিরপুর :
অফিস, আদালত কিংবা কর্মশালা নয়। নির্জন ঘরবাড়ি কিংবা অট্টালিকায় নয়। এটি একটি নিরিবিলি স্থানে দাড়িয়ে থাকা ঝকঝকে একটি এসি বাস। কিছুক্ষণ পরই দেখা গেল কয়েকজন যুবক যুবতী এসে উঠে পড়লেন দাড়ানো ওই বাসে। বসলেন নিজ নিজ আসনে। বাসের চালক সুইচ চেপে গেট লক করে চালু করলেন তার বাস। বাসের ইঞ্জিল চালু করলেও কিন্তু এক কদমও চলছে না বাসটি। ইঞ্জিল চালু রেখেই দাড়িয়ে থাকল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এটি যাত্রীবাহী কোনো বাস নয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতাধীন ভ্রাম্যমাণ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এটি। বাসের ভেতরে আসনের সামনে একটি করে রয়েছে কম্পিউটার। সেই কম্পিউটারে বসেই শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা নিচ্ছে প্রশিক্ষণ।
এমন দৃশ্য চোখে পড়ে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের ভিতরে থাকা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে কয়েকটি ফাকা ফাকা মেহগনি গাছের নিচে নির্জন স্থানে ওই বাসটিতে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরাধীন 'টেকনোলজি এমপাওয়ারমেন্ট সেন্টার অন হুইলস ফর আন্ডারপ্রিভিলেজড রুরাল ইয়ং পিপল অফ বাংলাদেশ (টেকাব)' শীর্ষক কারিগরি সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ বাসে করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ২ মাস ব্যাপী ৪ টি শিফটে মোট ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর করতে নিজেকে নিজেই স্বাবলম্বী করতে গ্রামের প্রত্যন্তঞ্চলের ১৮ থেকে ৩৫ বছরের শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের মধ্যে নতুন চেতনা আনতেই এমন উদ্যোগ। যুব উন্নয়ন অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় ৪০ জন শিক্ষার্থিকে ২ মাস মেয়াদি কোর্স হিসাবে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
সোমবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, দাঁড়ানো বাসে নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত দ্বিতীও ব্যাচের ১০ জন শিক্ষিত যুবক নিজ নিজ আসনে বসে কম্পিউটার চালাচ্ছেন। আর তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ফারুক আহমদ রিজভী নামের এক ব্যক্তি। সেখানে কথা হয় প্রশিক্ষকের সঙ্গে। তিনি জানান, এখানে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে আগত যুবক ছেলে- মেয়েদেরকে ওয়ার্ড ফাইল, এমএস অফিস, গ্রাফিক ডিজাইন, ইন্টারনেট আউট সাইড সহ নানা ধরনের প্রোগ্রাম শিখানো হচ্ছে। প্রশিক্ষণ নেয়া শিক্ষাথীর্রা জানান, যুব উন্নয়নের এমন উদ্যোগে বেশ খুশি তারা। তারা জানান, বিনা পয়সায় তারা কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন।
এদিকে উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের কমর্কতা মোঃ মোফাজ্জল আলী খান জানান, উপজেলার প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রতিটা ইউনিয়ন থেকে বেকার শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের কাছে আবেদন চাওয়া হয়েছিল। তাদের দেয়া তালিকা ধরে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ কমিটি গঠন করে পরিক্ষা এবং ভাইবার মাধ্যমে ২০ জন মেয়ে ও ২০ জন ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ায় তারা এ প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, প্রশিক্ষণের পর তারা একটি করে সনদ পাবে। এ সনদের মান প্রায় ৬ মাসের ডিপ্লোমা কোসের্র মতো। যে কোনো সরকারি বেসরকারি চাকুরিতে তারা এ সনদ দিয়ে আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়াও প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা এ সনদ দেখিয়ে ব্যাংক থেকে অল্প সুদে ঋণও তুলতে পারবেন। যা দিয়ে গ্রামের অবহেলিত যুবসমাজের বেকার সমস্যা দূর করতে পারবে। এ বিষয়ে নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ রতন সিংহের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, গ্রামের শিক্ষিত অনেক গরিব মেধাবী যুবক-যুবতীকে বিনা পয়সায় ভালো মানের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ২ মাস ধরে এ প্রশিক্ষণ তাদের দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে জীবনমান উন্নয়নে তারা স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
|| প্রকাশক ও সম্পাদক : আব্দুল্লাহ আল মামুন || নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস জয় ||
Copyright © 2024 আমার প্রাণের বাংলাদেশ. All rights reserved.You cannot copy content of this page