নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানী উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ঘুস-দুর্নীতির যেন শেষ নেই। দুর্নীতি রোধে মাঝে মাঝে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা গেলেও কিছুদিন পরই দেখা যায় সবকিছু চলছে আগের মতোই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একদিকে কড়াকড়ি করলে আরেক দিকে খুলে দেওয়া হয় দুর্নীতির নতুন পথ। অনুসন্ধানে উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গেলে সেবা গ্রহিতা ভুক্তভোগীরা অভিযোগ তোলেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে পাসপোর্ট অফিস। এসব অফিসে অলিখিতভাবে দালাল নিয়োগ দিয়ে প্রকাশ্যে চলে ঘুসের কারবার।যখন একজন পাসপোর্ট সেবা গ্রহিতা কম্পিউটারের মাধ্যমে আবেদন করতে চায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই দোকান থেকে পাসপোর্টে ধরন ও ক্ষেত্রবিশেষ তিন হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। দালাল চক্র ও পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীদের সাথে বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানদার সহ পাসপোর্ট অফিসের একাধিক ব্যক্তির যোগসাজশে পাসপোর্ট অফিসে কথিত ‘চ্যানেল মাস্টার’ ও নৈশ প্রহরীর মাধ্যমে এবং অ্যান্ড্রয়েমেন্ট এর দায়িত্বে যিনি আছেন তার মাধ্যমে প্রতিদিন এই ঘুসের টাকা তোলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে পাসপোর্ট করাতে আসা সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। দালালদের দৌরাত্ম্যে কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পর্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছেন।
পাসপোর্ট করাতে আসা অন্তত কয়েকজন ব্যক্তি ও কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে সাধারণ লোকজন পাসপোর্ট করাতে আসেন। তাদের বেশির ভাগই পাসপোর্ট তৈরির কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নন। পাসপোর্ট করাতে কী কী কাগজ লাগে বা কী করতে হয়, তা জানেন না। এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে সংঘবদ্ধ দালাল চক্রটি এসব সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা কার্যালয়ের ভেতর ও বাইরে সমানভাবে হয়রানি করছে সাধারণ মানুষকে। কার্যালয়ের বাইরে থাকতেই বেশির ভাগ সময় সুযোগ বুঝে পাসপোর্ট করাতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কাগজপত্র হাতিয়ে নেয় দালালেরা।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, উত্তরা পাসপোর্ট অফিসেই বিভিন্ন মাধ্যমে দিনে ঘুস ওঠে কমপক্ষে কয়েক লাখ টাকা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন কম্পিউটারের দোকানদার বলেন, দুপুর ১২ টার পরে আর ফাইল জমা নেওয়া হয় না। যার কারনে অনেক ক্ষেত্রেই দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসে না পৌঁছালে, পাসপোর্ট অফিসে সেবা প্রত্যাশীরা আর ফাইল জমা দিতে পারেন না।
অনেক ক্ষেত্রে চাকরিজীবী ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ততার মাঝে দুপুর ১২টার মধ্যে পাসপোর্ট অফিসে পৌঁছাতে পারেননা। এই ধরনের অনেক নিয়ম আছে। যার জন্য সেবা প্রত্যাশীরা ঝামেলায় এড়াতে আমাদের মতন কম্পিউটার দোকানে আবেদন করার পরে তারা হয়রানি শিকার হয়ে পুনরায় আমাদের কাছে ফিরে আসেন কিভাবে সহজে পাসপোর্ট করা। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে বাস্তবতা ভিন্ন, টাকা দিলেই এখানে সবকিছু হয়। ওই অফিসে কে টাকা নেই এমন প্রশ্নের উত্তরের তিনি বলেন, অফিসে অনেকেই টাকা নিয়ে এ ধরনের কাজ করে থাকে। যখন যাকে টাকা দেবো এই প্রসেসগুলো সেই কমপ্লিট করে থাকে। মূলত ওই অফিসের অ্যান্ডরোমেন্টের দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি সবকিছু পরিচালনা করে থাকেন।
অনুসন্ধানের জন্য পাসপোর্ট অফিসে এই প্রতিবেদক গেলে জানা যায়, অ্যান্ড্রোমেন্টেড দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ও কম্পিউটার দোকানদার, পার্স পোট দালাল মুরাদ সহ অনেকেই জড়িত। এই দালাল চক্রের মুল হতো হচ্ছে মুরাদ।যার আছে কয়েক জন আরো পাতি দালাল।যারা নাকি উত্তরা ১২ নাম্বার সেক্টর ৪ নাম্বার রোডের পশ্চিম মাথার ৭১নাম্বার বাড়ির নীচ তালায় গ্যারেজ ভাড়া করে যেখানে জমিয়েছে দালালদের পার্সোপোট বানানোর মেলা। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দলালচক্র ও যে সকল দোকানদার সেবা গ্রহীতার আবেদন ফরম পূরণ করে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকেন পাসপোর্ট অফিসের এই দালাল মুরাদ। অ্যান্ডোমেন্ডের দায়িত্বে থাকা এই ব্যক্তির সাথে তাদের অনেক সখ্যতা রয়েছে। মাঝেমধ্যে মোটরসাইকেলে তাদের সাথে ঘুরতে দেখা যায় তাকে।পার্সপোট বানানোর দালাল মুরাদ কে তার কৃতকর্মের কথা জিজ্ঞেস করার জন্য বার বার মুঠো ফোনে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। ভুক্তভোগী ও এলাকা বাশীর প্রশাসনের কাছে একটাই দাবি, এরকম মুরাদের মত দালালদের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে হয়রানি থেকে বাঁচান।এখানে কম্পিউটারের কাজ করেন ছেলেটি বি এ পাস। পেটের দায়ে এসব করেন বলে তিনি জানান। পুরো এলাকা জুড়ে আমার মতন অসংখ্য কম্পিউটারের দোকানদার আছে। তারা সবাই এভাবে কাজ করে আসছে। টাকাটি কোথায় কার কাছে কিভাবে দেওয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাতের আঁধারে এসব টাকাগুলো অফিসে পৌঁছে দেওয়া হয়। টাকাটি কার হাতে দেওয়া হয় জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যায় এবং তিনি বলেন অফিসের আমাদের কর্মের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।’
এ তথ্য উঠে এসেছে দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ অনুসন্ধানে। প্রশ্ন হলো, পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না কেন? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে সদিচ্ছা থাকলে তো এমনটি হওয়ার কথা নয়। পাসপোর্ট খাত দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাতগুলোর অন্যতম। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) খানা জরিপ ২০২৪ অনুযায়ী, ওই বছর দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে (৭০.৫ শতাংশ) ছিল এ খাত। এখনো এ খাতে ঘুস বাণিজ্য ও হয়রানি চলছে অব্যাহতভাবে। আমাদের সময় ডটকম এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সংক্রান্ত নানা তথ্য।
শুধু নতুন পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রেই নয়, সরকার ই-পাসপোর্ট চালু করার পর সুযোগসন্ধানীরা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নবায়নের নামেও রমরমা ঘুস বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্যগত জটিলতার কারণে যারা ই-পাসপোর্ট করাতে পারছেন না, তারাই হচ্ছেন এর শিকার। ই-পাসপোর্ট এড়িয়ে মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে তারা নবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন পুরোনো পাসপোর্ট। জানা গেছে, ক্ষেত্রবিশেষে এই ঘুসের পরিমাণ হয়ে থাকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। উদ্বেগের বিষয় হলো, যেসব অপরাধী জাল-জালিয়াতি করে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই ভুয়া জন্মনিবন্ধন দিয়ে এমআরপি করিয়েছিল, তারাও এখন ঘুসের বিনিময়ে এমআরপি নবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন বলে ইতঃপূর্বে খবর বেরিয়েছে। হয়রানি মুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার।
এ দিকে একজন পাসপোর্ট সেবা গ্রহিতা ভুক্তভোগী অভিযোগ তোলেন, উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ঘুস ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায় না বললেই চলে। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব করছে এবং এর ফলে প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখার পরও প্রবাসী শ্রমিকরা পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে নানাভাবে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমার নিকট আত্মীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে ইতিপূর্বে নানাভাবে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হয়েছিল। অথচ দুর্নীতিবাজদের কারণে একশ্রেণির মানুষ ঘুস দিয়ে অবৈধভাবে সেবা নিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে পারে না। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পাসপোর্ট পেতে পারে, সে জন্য প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা এবং নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন।”
সেবা গ্রহীতা নার্গিস আক্তার জানান, ‘উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পাশে ৪ নাম্বার রোডে রয়েছে দালাল মুরাদের আন্ডার ওয়ার্ল্ড, দালালদের গডফাদার মুরাদের আস্তানা।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রশ্ন? যেহেতু পাসপোর্ট অফিসটি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাহলে কিভাবে দালাল চক্রের কার্যক্রম বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হচ্ছে।