মোঃ সোহেল রানা :
আশুলিয়ার তাজরীন ট্রাজেডির ১২ বছর পূর্তি হলো আজ কিন্তু শেষ হয়নি নিহতের পরিবারের আহাজারি কান্না ও আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবার আকুতি।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সামান্য সহযোগিতায় কিছুটা স্বস্তি পেলেও আতঙ্ক কাটেনি শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়া শ্রমিকদের। অনেকটা অবহেলার মধ্য দিয়ে এখন তারা দূর্বিষহ জীবন পার করছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে পোশাক তৈরি কারখানায় অগ্নিকান্ডে একসঙ্গে এত শ্রমিক হতাহতের ঘটনা এটাই প্রথম।
২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিলো। এ ঘটনায় ১১৩ জন শ্রমিক জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন আরও অন্তত শতাধিক। যদিও নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কারখানাটিতে ১ হাজার ১৬৩ শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ৯৯৮ শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডে পুড়েছে কারখানার সকল মালামাল ও সম্পূর্ণ ভবনটি। সেই পুড়ে যাওয়ার ছাপ এখনো ভবনের চার পাশে লেগে আছে। সেদিনের পর থেকে ভবনটির কর্যক্রম একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলেও পুড়ে যাওয়া ৮ তলা ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে দাড়িয়ে আছে।
ভবনটি নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাররা সহ ভবনের আশে পাশের বাড়িওয়ালারা। শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরের পুরে যাওয়া ভবনটির সামেন গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির প্রধান গেটে তালা ঝুলানো। এখানো ভবনটির প্রত্যেক জানালায় আগুনের ছাপ লেগে আছে। অন্যদিকে ২৪ নভেম্বরের এই দিনটিকে ঘিরে ভবনটির গেটে বিভিন্ন ধরণের পোষ্টার লাগানো হয়েছে।
যেখানে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার সময় আশপাশের বাড়ির টিন সেড ঘরের প্রায় ১৫ টির রুম পুড়ে গেছে। তারা সব সময় আতঙ্কে থাকেন কখন আবার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। তাই তাদের দাবি এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হোক।
এ ভবনটি নিয়ে আতঙ্কে দিন পাড় করা ওষুধ ব্যবসায়ী হৃদয় বলেন, কারো যদি মেরুদন্ড ভেঙে যায় তাহলে কি সে দাড়াতে পারে? পারে না। আমি মনে কি এই ভবনটির মেরুদন্ড ভেঙে গেছে। এই ভবনের কারণে আরও দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা উচিত।
তাজরীনের আগুনে পুড়ে যাওয়া আহত শ্রমিক রেহেনা আক্তার বলেন, আমি একজন তাজরীনের অসুস্থ শ্রমিক। আমার মেরু দন্ডের হার ভাঙ্গা। আমি কোনো কাজ-কর্ম করতে পারি না। আমি বর্তমানে ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি ।
আমার ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাইতে পারছি না। অন্য কোথাও চাকরিও হচ্ছে না। আমি আহত তাই কেউ চাকর দিতে চায় না। আমার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয়। তাই আমার দাবি চিকিৎসা দিলে ভালো মত দেওয়া হোক। সেই সাথে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার ডক্টর ইউনূসের কাছে আবেদন, আমাদের দ্রুত ক্ষতি পুরণটা দেওয়া হোক।
নাসিমা আক্তার নামের আরেক আহত শ্রমিক বলেন, আমার মেরুদন্ডের হার ভাঙ্গা। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন পঙ্গুত্ব নিয়ে বাঁচতে হবে। বর্তমানে আমি একটি ঝুটের গোডাউনে দিনে ২০০ টাকা রোজে কাজ করি। সেখানে যেতে আমি বাধ্য হয়েছি। কারণ অন্য কোন চাকরি মিলছে না।
আমি অনেক ফ্যাক্টরির সামনে গিয়েছি। তাই আমার দাবি ন্যায্য ক্ষতি পুরণ ও দীর্ঘ মেয়াদী সু চিকিৎসার ব্যবস্থা হোক। এ সময় তিনি প্রধান মন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলার পত্যায় ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা মাহাবুর রহমান ইসমাইল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ অগ্নিকান্ডে পুরে যাওয়া ক্ষতি ভবনটি ভেঙে বা সংস্কার করে এখানে তাজরীনের আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের পারিবারের বাসস্থান করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
কিন্তু আমাদের এই দাবির কোনো প্রতিফলন দেখছি না। অন্যদিকে এই মামলার বিচার কার্য থেমে আছে, তারও কোনো অগ্রগতি দেখা মিলেনি।
অন্যদিকে ভয়াবহ ওই ঘটনার পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম অবহেলা জনিত হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলা দায়েরের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচারের কার্যক্রম, তবে রাষ্ট্র পক্ষ আশা করছে, খুব দ্রুতই শেষ হবে বিচার কার্যক্রম।
জানা যায়, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত তাজরীন ফ্যাশন এর মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন তার মেয়ে তাজরীনের নামা অনুসারেই প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করেছিলেন। আহত ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারের দাবী,অন্তবর্তী সরকারের নিকট দ্রুত আমাদের দাবি টি শেষ করা হোক।