শাহাদাৎ হোসেন (ইমরান) :
১০ মাসের ক্ষতিপূরণ ও টার্মিনেশন তুলে নিতে ক্রাউন এক্সক্লুসিভ ওয়্যারস লিঃ এর শ্রমিকরা আন্দোলন করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত। বিচারের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তারা। আশ্বাস দিলেও কোন সুরাহা হয় নাই। গার্মেন্টস মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন তারা।
জানা যায়, চাকুরী নিতে হলে ঘুষ বাণিজ্য, প্রতিমাসে ম্যানেজমেন্টকে ঘুষ দেওয়া, রমজান মাসে ইমামের তারাবির হাদিয়ার টাকার অর্ধেক হাদিয়া ম্যানেজমেন্টের পকেটে ঢুকানো, করোনার সময় শ্রমিকদের কাজের টাকা না দেয়া, কোম্পানী ম্যানেজমেন্ট এর স্টাফরা ফ্যাক্টরি থেকে সোয়েটার চুরি শ্রমিক জানার পর আবার শ্রমিকদের হেনস্থা করা সহ নানা অভিযোগ তুলে ম্যানেজমেন্ট এর উপর। এই অভিযোগই যেন তাদের কাল হয়ে ওঠে। ম্যানেজমেন্ট মালিকের সাথে আতাত করে ৩২৮ জন শ্রমিকের বেতন না দিয়ে তাদেরকে বিজিএমইএ কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। কালো তালিকার কারণে শ্রমিকরা অন্যত্র চাকরী নিতে না পারায় কষ্ট ও অনাহারে জীবন যাপন করছেন তারা।
শ্রমিকরা জানায়, অন্যায় ভাবে জোরপূর্বক আমাদের জিম্মি করে কাগজে সাইন নিয়ে ফ্যাক্টরি থেকে বের করে দেয় কর্মকর্তারা। আমরা অন্য ফ্যাক্টরিতে চাকরি নিতে গেলে জানতে পারি আমাদের ৩২৪ জন শ্রমিকের টার্মিনেশন বা কলো তালিকা করে দেয়া হয়। টার্মিনেশন সম্পর্কে আমরা বুঝতাম না। পরবর্তীতে জানতে পারলাম শ্রমিক নিয়োগে আমাদের ৩২৪ জন শ্রমিককে বিজেএমইএ থেকে কালো তালিকা করে রাখা হয়েছে। আমরা কোন ফ্যাক্টরিতে নতুন করে চাকরি নিতে পারছিনা। আমরা সবাই পরিবার নিয়ে অনাহারে জীবন যাপন করছি। টার্মিনেশন তুলে নিতে ও ১০ মাসের ক্ষতিপূরণ এর দাবিতে আমরা গত ৯ মাস যাবৎ গাজীপুর, জাতীয় প্রেসক্লাব, শ্রম অধিদপ্তর, বিজিএমইএ ভবন সহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন করে যাচ্ছি। কোন সুরাহা হয় নাই।
এর আগে গত ১৬ (নভেম্বর) শনিবার থেকে বিজিএমইএ ভবণের সমনে আমরা ৭২ ঘন্টা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে তারা। পরবর্তীতে বুধবার ২০ (নভেম্বর) মালিকপক্ষের সাথে বসে সমাধান করার কথা জানান তারা।পরবর্তীতে বিজিএমইএ ভবনে আসলে ভবনের কর্মকর্তারা তাদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি। এর প্রেক্ষিতে আমরা পুনরায় অবস্থান কর্মসূচি করে আন্দোলন করতে থাকি। এ সময় বিজিএমইএর কর্মকর্তারা আন্দোলনরত শ্রমিক আরিফুল ইসলামকে গাড়ি থেকে ফেলে আহত করেন মনসুর খালেক। গুরুত্বর আহত হয়ে আরিফুল হাসপাতালে ভর্তি হন। এ সময় ভবনের ভেতর থেকে বিজিএমইএ এর কর্মকর্তারা ভবনের বাইরে বের হতে পারে নাই। শ্রমিকরা উত্তেজিত হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে আসলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় বিজিএমইএ এর কর্মকর্তারা তাদের দাবি পূরণের আশ্বস্ত করে এবং গার্মেন্টস মালিকের সাথে কথা বলা হবে বলে জানায় তারা।
আন্দোলনরত শ্রমিক শরিফ জানায়, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর মালিকপক্ষ, শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা ও বিজিএমইএ কর্মকর্তারা বসে শ্রমিকদের দাবী পূরণ না করেই চলে যান বলে জানায় শ্রমিকরা। কলো তালিকা না তুলে আমাদেরকে একটি নোটিশ দেওয়ার কথা বলে, যার মাধ্যমে আমরা চাকুরী নিতে পারব এবং আমাদের কোন রকম ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে জানায় তারা। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
এ বিষয়ে গ্রীন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কারস ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক সুমি জানান, প্রত্যেক শ্রমিককে পৃথক পৃথক একটি নোটিশ দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে তারা অনত্র চাকুরী করতে পারবে। শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে গার্মেন্টস মালিক পক্ষ বা বিজিএমইএ কিছুই করতে পারবে না বলে জানায় তারা। রবিবার নোটিশের বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাথে বসে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে গার্মেন্টস এর মালিক আরিফ সাহেবের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায় নাই। তার মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করে নাই।
|| প্রকাশক ও সম্পাদক : আব্দুল্লাহ আল মামুন || নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস জয় ||
Copyright © 2024 আমার প্রাণের বাংলাদেশ. All rights reserved.You cannot copy content of this page