রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বৈশ্বিক সংকট ও কৃচ্ছ সাধনের মধ্যে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে নতুন অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে না। বাজেটের (২০২৩-২৪) শুরুতে যে অর্থ বরাদ্দ ছিল, তার মধ্যে কার্যক্রম শেষ করতে হবে। এছাড়া উন্নয়ন খাতের কোনো অর্থ ব্যয় না হলে সেটি ভিন্ন খাতে (পরিচালন) স্থানান্তর করা যাবে না। চলতি বাজেট সংশোধনের ক্ষেত্রে এসবসহ একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সব সচিবকে। বুধবার অর্থ বিভাগ থেকে এটি জারি করা হয়। সেখানে আরও বলা হয়, এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকল্প বাস্তবায়নকে। সব মন্ত্রণালয়কে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধিত অর্থ ব্যয়ের প্রাক্কলন প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ পুরোটা খরচ করতে পারে না অনেক মন্ত্রণালয়। সেখানে নতুন করে অর্থ চাইবে কেন। নতুন বরাদ্দ দিলেও ব্যয় করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোর যে প্রকল্প আছে, সেখানে অর্থব্যয়ের প্রভিশন আছে। সেটি সীমিত রাখাই উচিত। এক খাতের অর্থ অন্য খাতে নেওয়ার প্রবণতা থাকা উচিত নয়। এই অর্থনীতিবিদের মতে, এমনিতে অনেক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় একনেকে। এর মধ্যে কিছু প্রকল্পের অর্থ সংস্থান থাকে না। অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া উচিত।
প্রতিবছরের মতো এবারও বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের হিসাবে করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার পর অর্থনীতি এখন রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে পড়েছে। এতে একদিকে উৎপাদন ও বিপণনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমেছে। ফলে অর্থনীতিতে বহুমুখী ক্ষতি হচ্ছে। সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ১৮ দিনের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এসব কর্মসূচির কারণে প্রতিদিন গড়ে অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে ১৮ দিনে সার্বিক অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা।
এ পরিস্থিতিতে বাজেট সংশোধন কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। ফলে সেখান থেকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, মূল বাজেটে যে অর্থব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই উন্নয়ন ও পরিচালন কাজ শেষ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বলা হয়, ধীরগতি প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ডলার সংকট কাটাতে বৈদেশিক ঋণের বা অনুদানের প্রকল্পের ক্ষেত্রে পিএল অংশের অর্থ পুরোটা খরচ করা যাবে। প্রকল্পে প্রাপ্য বৈদেশিক মুদ্রার পরিপূরক স্থানীয় মুদ্রা বরাদ্দের দাবির প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈদেশিক ঋণ পাওয়া নিশ্চিত প্রকল্প ছাড়া অননুমোদিত কারিগরি সহায়তা প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়, অপ্রত্যাশিত খাত থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে তার প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতের বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ এবং জ্বালানি খাতের ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। আবাসিক, অনাবাসিক ও অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। যানবাহন, আকাশযান কেনা বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করতে হবে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ থাকবে। বিদেশ ভ্রমণ ব্যয় স্থগিত থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জুলাই-সেপ্টেম্বর-তিন মাসে রাজস্ব আদায় ৭৬ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ হাজার ১৯৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা কম। চলতি অর্থবছর (২০২৩-২০২৪) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৯৪৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
|| প্রকাশক ও সম্পাদক : আব্দুল্লাহ আল মামুন || নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস জয় ||
Copyright © 2024 আমার প্রাণের বাংলাদেশ. All rights reserved.You cannot copy content of this page